রুওয়েদা রাজা ( ১৭) র ফেসবুক পেজ ' থাম্বি বাই রুয়ি ' ( Thumbi by Ruwi) যে সমস্ত নক্সা করে কাটা কাগজ দিয়ে সাজানো বাক্স বা ধন্যবাদ জ্ঞাপক কার্ড ( Thank you card) দেখতে পাওয়া যায়, তার পেছনে একটা লুকোনো গল্প আছে। গল্পটা অটিজিম বা বিশেষ ধরণের মনোরোগের যার শিকার হয়েছিল রুওয়েদা। এই অসুখের স্তর থাকে। রুওয়েদা ছিল মাঝামাঝি থেকে বেশিরকম স্তরের অন্তর্গত। এখানে রুওয়েদার অভিভাবকদের একটা বিশেষ ভূমিকা ছিল, মুখ্যত মা সুলেখার যোগদানের কথা বলার মতো।
সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর ( UAE) সারজাতে ইনফরমেশন টেকনোলজি ফার্মে চাকরি করত রুওয়েদার বাবা মহম্মদ রাজা। সুলেখা ছিল শিক্ষিকা। সেই সময় রুইর জন্ম হয়। দু বছর বয়েসেও রুই কথা না বলতে পারায় তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় এবং মাস তিনেকের মধ্যে ধরা পড়ে রুই অটিজিমে আক্রান্ত। সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে সুলেখা। কিছুদিন কাটলে সুলেখা এই কষ্ট থেকে বেরিয়ে এসে ব্যাপারটা শক্ত হাতে ধরে। ২০০৬ সালে ব্যাঙ্গালোরে অনুষ্ঠিত অটিজিম চিকিৎসা সম্বন্ধিত একটা শিবিরের ( Com DEALL) খবর পায়, বিশেষ করে সেই সব বাচ্চাদের যাদের কথা বলার অসুবিধে আছে। ছোট্ট রুই কে নিয়ে ব্যাঙ্গালোরে একটা ভাড়ার ফ্ল্যাটে তিন বছরের জন্য চলে এল সুলেখা। এই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে দুজনেই লাভবান হল। রুই দু চারটে কথা বলতে শিখল আর দলবদ্ধ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সুলেখাও মানসিক শক্তি ফিরে পেল।
২০০৯ সালে ওরা শারজা ফিরে গেল। এই দম্পতি এখন বুঝে গেছিল যে অটিজম এমন একটা সমস্যা যা সারা জীবন ধরেই বয়ে নিয়ে চলতে হবে। ওরা রুইকে একটা সাধারণ স্কুলে ভর্তি করে দিল। কিন্তু সেখানে রুই মানাতে পারল না। এরপর তারা রুই কে বিভিন্ন অক্ষমতা সম্পন্ন বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তি করল। সেখানেও বিশেষ সাহায্য হল না। দিন দিন রুইকে সামলানো সুলেখার জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। ইতিমধ্যে রুইয়ের মৃগী রোগও ( Epilepsy) দেখা দিল এবং তার চিকিৎসাও শুরু হল ওষুধের মাধ্যমে ( Antiepileptics)।
রুইয়ের যখন ন'বছর বয়েস, সুলেখা ওকে নিয়ে ভারতে ফিরে আসে এবং পরিবারের লোকেদের সাহায্য চায়। বিশেষ করে সুলেখার মায়ের যিনি তিরুভানন্তপুরমে থাকতেন। রুইকে প্রশিক্ষণের জন্য তিনি এক বছরের সময়সীমা ধার্য করলেন। এই প্রশিক্ষণের মধ্যে ছিল রোজকার কাজকর্ম। এমনকি মাসিক ঋতুস্রাব সামলানোর কায়দাও ছিল এই প্রশিক্ষণের মধ্যে। সাড়ে ন' বছর বয়েসেই ঋতুস্রাব শুরু হয়েছিল রুইয়ের। দশ বছর বয়েস থেকে রুই একা একা শোয়াতে স্বচ্ছন্দ হয়ে উঠল।
২০১৪ সালে সুলেখা UAE তে ফিরে গেল। কিন্তু রুইয়ের ক্রমবর্ধমান চূড়ান্ত মেজাজ এবং রেগে যাওয়া নিয়ে সুলেখা এবং রাজা হিমসিম খেয়ে যাচ্ছিল। ২০১৭ সালে ওরা আবার তিরুবনন্তপুরমে ফিরে আসে। রুই কে CADRRE নামক অটিজমদের জন্য নির্দিষ্ট স্কুলে ভর্তি করে দেয়। " এটাই ছিল আমাদের সেরা সিদ্ধান্ত। " সুলেখা নিজেও অটিজম -এর ওপর পড়াশোনা করে ওই স্কুলেই শিক্ষকতা শুরু করে। প্রত্যেক বাচ্চার প্রতি বিশেষ নজর দিয়ে তার উপযুক্ত ট্রেনিং এর ফলে রুইয়ের প্রভূত উন্নতি হয়। একই কাজ বারবার করার ঝোঁক থাকায় কাগজ কেটে বাক্স সাজানো বা রঙ দিয়ে চিত্র বিচিত্র ( যাকে marbling বলে) রুইয়ের পক্ষে উপযুক্ত ছিল।
হিন্দি, তামিল ও মালায়ম সিনেমার গান শুনতে ভালোবাসে রুই। টিভি তে অ্যানিমেশন আর অন্যান্য অনুষ্ঠানও পছন্দ করে। ' থাম্ব বাই রুই ' নামক ফেসবুক পেজে বেশ কিছু ভিডিও আছে। সেগুলো দেখলে দেখা যাবে, নীচু স্বরে গুনগুন করতে করতে হাতের কাজ করছে রুই। রুওয়েদা নামের মানেই তছবিঃ ভিকি রয়ো তাই, ' ধীরেসুস্থে চলো '।